বিশ্বজুড়ে
মাংকিপক্সে শনাক্তের হার বাড়ে চলেছে। আর এই ভাইরাসে সবেচেয়ে বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন
সমকামীরা। নতুন করে শনাক্তের বেশির ভাগই ইউরোপ ও আমেরিকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস বুধবার সাংবাদিকদের
বলেন, মাংকিপক্সের
প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। তবে মাংকিপক্স
নিয়ে বিভ্রান্ত তথ্য না ছড়ানোর জন্য আহ্বানও
জানিয়েছেন তিনি। মাঙ্কিপক্স রোগটির নামের উৎপত্তি হয়েছে মাংকি অর্থাৎবাঁনর থেকে। কারণ রোগটি প্রথমে একটি বাঁনরের
মধ্যেই পাওয়া গিয়েছিল।
তিনি আরো জানান, এই পর্যন্ত বিশ্বের ৭৮টি দেশের মধ্যে মাংকিপক্স শনাক্তের হার ১৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ইউরোপে এবং ২৫ শতাংশ আমেরিকা শনাক্ত হয়েছে । গত মে মাসের পর থেকে পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকান দেশের বাইরে মাংকিপক্সের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তবে আফ্রিকান ওইসব দেশে মাংকিপক্স একটি স্থানীয় রোগ। ১৯৭০ সালে প্রথম কঙ্গোর ৯ বছর বয়সী এক বালকের দেহে মাংকিপক্স শনাক্ত হয়।
তারপর জাতিগতভাবে ছড়িয়ে
পড়ে। আফ্রিকার ১১টি দেশে মাংকিপক্স শনাক্ত
হয়। আফ্রিকার বাইরে প্রথম মাংকিপক্স শনাক্ত হয় ২০০৩
সালে। জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্স পৌঁছে যায়। যা
ছিল আফ্রিকার বাইরে প্রথম। অনুমান করা হয় যে ঘানা থেকে আনা আক্রান্ত ইঁদুরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে এই মাংকি ভাইরাস। ওই সময় একটি কুকুরের দেহে থেকে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে আফ্রিকার নাইজেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে মাংকিপক্স। ওই বছর ২০০ জনের দেহে এটি শনাক্ত হয়।
মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৩ শতাংশ।পরের পাঁচ বছর বিশ্বে বিক্ষিপ্ত বেশ কয়েকটি কেসের খবর পাওয়া
যায়। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে নাইজেরিয়া থেকে আসা ব্যক্তিদের দেহে থেকে এই ভাইরাস
পাওয়া যায় । এ বছর মে মাসে আফ্রিকার বাইরে অসংখ্য মাংকিপক্সে শনাক্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। যারা কেউ
আফ্রিকা যায়নি। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগ ছিলেন সমকামী পুরুষ। জুনের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান
জানান বিশ্বের ২৯টি দেশে এক হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন
তারা। জুলাইতে ৭৮টি দেশের ১৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত । এই মাসেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া
যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি
অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু।
টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস বলেন, ৯৮ শতাংশ রিপোর্ট পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌন সম্পর্কে ঘটে। এই রোগে সমকামী পুরুষদের তুলনামূলকভাবে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। যদি যৌনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যদি আরেকটু সংযমী ও সচেতন হওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে এই রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন , আমরা কোভিড ১৯ সম্পর্ক অনেক ভুল তথ্য দেখেছিলাম। এখন মাংকিপক্স সংক্রান্ত অনেক ধরনের খবর দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এর ক্ষতিকারক তথ্য প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, প্রযুক্তি সংস্থা ও সংবাদ সংবাদমাধ্যমগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি।
বিরল সংক্রমণ রোগ
মাংকিপক্স বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় গত শনিবার জরুরি অবস্থা ঘোষনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু । রোগটির সংক্রমণ ঠেকাতে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর
মানুষকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ গ্রহণে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন
তিনি। মাংকিপক্স একটি
বিরল প্রজাতির স্মল পক্স বা কাউ পক্স ধরনের ভাইরাস। যা সাধারণত
মৃদু হয়। বেশিরভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। ভাইরাসটি খুব
সহজে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না। ব্যাপক হারে
মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই কম থাকে। তবে ইঁদুর , বিড়াল, বাঁদর ও বন্য পশুপাখি থেকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে
।
0 মন্তব্যসমূহ
Do not share any Link