পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজের ভোট ফিরে পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির ঃ
উনিশের লোকসভা
ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোটবাক্সে সাফল্য এনে দেয় জঙ্গলমহল। পরবর্তী একুশের
বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলসহ আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক গেরুয়া শিবির থেকে ফের জঙ্গলমহলে স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছে । সামনেই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন।
পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজের ভোট ফের ফিরে পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির । রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেশের প্রথম আদিবাসী
প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্ম হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস । এমনটাই মনে করছে রাজনীতিবিদরা । দ্রৌপদীর কে ব্যবহার করে জঙ্গলমহলের তৃণমূলের আদিবাসী
ভোটব্যাংকে ফাটল ধরিয়ে নিজেদের দিকে আনতে ছক কষছেন বিজেপি নেতারা ।
রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনে বিরোধীদের প্রথমে নাম ঘোষণা করতে দিয়ে , পরে আদিবাসী নারী প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে
দাঁড় করিয়ে দিয়ে মোক্ষম চাল দিয়েছেন মোদিজি । বিরোধীরা ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি বিজেপির এই চাল। প্রথম আদিবাসী প্রার্থী তার ওপর নারী
সবমিলিয়ে বিরোধীদের সব হিসাব-নিকাশকে উলটে পালটে দেয় ।। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোটেই বুঝতে পারেননি এমনটা হতে পারে। তাই দ্রৌপদী মুর্মুর নাম
ঘোষণার পর তিনি বলছেন
, আমাদের সঙ্গে কথা বললেও
প্রার্থীর নাম নিয়ে কথা বলেন নি ,তবে বললে ভেবে দেখা যেত ।
জঙ্গলমহলসহ
রাজ্যের অন্তত ৪৭টি বিধানসভা ও সাতটি লোকসভা আসনে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। এর বেশির ভাগই একুশের ভোটের নিরিখে এখন তৃণমূলের দখলে। এখন
বিজেপির চালে পা দিয়ে দ্রৌপদীকে মুর্মুকে সমর্থন না করে কি বিপাকে পড়লো তৃণমূল , প্রশ্ন
এখানেই । এ থেকেই বোঝা যায় তিনি সত্যই কি আদিবাসী দরদী ?
দ্রৌপদী মুর্মু
আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে এসে কর্পোরেশন কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক এবং পরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের
রাজ্যপাল ছিলেন। গেরুয়া শিবির দীর্ঘদিন
ধরেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের বিশ্বাস যোগ্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে
চলেছে। এরই মধ্যে দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের
মতো গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদার লড়াইয়ে
প্রার্থী করে তারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের আরও কাছাকাছি চলে আসার চেষ্টা করছে
।
ওদিকে জঙ্গলমহলে আবার বহুজন সমাজ পার্টি আদিবাসী মহলে গ্রহণ
যোগ্যতা বাড়িয়ে তুলছে । বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকরের চিন্তাধারা দলিত ও আদিবাসী সমাজে
ছড়িয়ে দিচ্ছে । যা আগামী দিনে ত্রিমুখি লড়াই হতে যাচ্ছে । এই বাংলায়
তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি নির্নায়ক শক্তি । কিন্ত পরিতাপের
বিষয় হল কংগ্রেস , বাম , বিজেপি ও তৃনমূল
কংগ্রেস কোন পক্ষই এদেরকে ভোট ব্যাংকের উদ্ধে তুলে ধরার কথা ভাবেনি বা তাদের আর্থিক ও সামাজিক ভাবে কোন
উন্নতি করে নি , ভাবেনি তাদেরকে
নেতৃত্ব পদে তুলে আনার কথা । তাদের মধ্যে থেকে প্রকৃ্ত গ্রহণ যোগ্য নেতা বা নেত্রি তৈ্রি
করার কথাও । আজ সমস্ত মনুবাদী রাজনৈ্তিক দলগুলিতে উচ্চ বর্নের নেতা বা নেত্রীর
দেখা যায় বেশি । সেই সব রাজনৈ্তিক দলে কোন তফসিলি জাতি বা উপজাতির কোন নেতা নেই
। তাদেরকে রাজনৈ্তিক বা ধর্মীয় গোলামে পরিণত করেছে ।
ভারতে তফসিলি জাতি ও
উপজাতির জনসংখ্যা ২২.৫ শতাংশ। দেশটির ৪৭টি লোকসভা আসন এবং ৪৮৭টি
বিধানসভা আসন তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। গত লোকসভা ভোটে এর মধ্যে ৩১টি আসন
জিতেছিল বিজেপি। চব্বিশে এই ৪৭ আসনই দখলের জন্য রাষ্ট্রপতি ভোটে আদিবাসী দ্রৌপদী
মুর্মু কে বেছে নিয়েছে ।
এরমধ্যে
পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা আসনগুলোও রয়েছে। আবার গুজরাট,মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাতে যেখানে সবমিলিয়ে ১২৮ বিধানসভা আসন
রয়েছে। ওই সব রাজ্যগুলোর মধ্যে
একমাত্র গুজরাট ছাড়া , বিজেপি ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটেও এই আদিবাসী দরদী চালকে কাজে লাগতে চাইছে । আর এর পেছনে আরএসএসের পাকা মাথা
কাজ করছে । এমনটাই মনে করছে
রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিমবঙ্গে
বিজেপি যে আদিবাসী কার্ড খেলবে চব্বিশের লোকসভায় তা পরিষ্কার হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।
বিজেপির নব নির্বাচিত
বিধায়কদের নিয়ে গত সোমবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে দ্রৌপদী মুর্মুকে স্বাগত জানাতে
যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি
সুকান্ত মজুমদার। সেখানে দেখা গেছে, দলের আদিবাসী বিধায়ক ও সাংসদরা দ্রৌপদী মুর্মুকে সংবর্ধনা জানাতে
মূল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাকে স্বাগত জানানো হয় জঙ্গলমহলের
আদিবাসী নৃত্য দিয়ে।
0 মন্তব্যসমূহ
Do not share any Link