বীরভূমের
লড়াকু তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল
গ্রেপ্তার। তৃণমূলের
বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে
তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে গরুপাচার মামলায় গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। আজ বৃহস্পতিবার
সকালে তার বোলপুরের বাড়ির গিয়ে দরজা বন্ধ
করে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। তার পর তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল, আগের অনুব্রতের সঙ্গে আকাশপাতাল তফাত যেন ধোয়া তুলসি পাতা । মঙ্গলবার রাতেই অনুব্রতকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে দেখা
গিয়েছে। বোলপুরের নিজের ঘরে বসে বীরভূমের
দাপুটে তৃণমূল নেতাকে নাকি কান্নাকাটিও করতে দেখা যায় এই খবর প্রকাশ হয়ে যায়।
আগের দিনই অনুব্রত এস এস কে এম হাসপাতালে গিয়েছিলেন শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে জানিয়ে দেয় যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। সেই চিকিৎসা বাড়িতে বসেই করা যেতে পারে। তবে উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিনে তাঁর জায়গা না হওয়ায় কিছু একটা আশঙ্কাও করেছিলেন।অনেক দিন ধরেই গরুপাচার মামলায় তাকে নিয়ে টানাপড়েন চলছে। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে অনেক বার গরুপাচার মামলায় অনুব্রতকে দেখা করার জন্য নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুব্রত শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গরহাজির থেকেছেন । সেই অসুস্থতার প্রমাণস্বরূপ তিনি কখনও গিয়েছেন বীরভূমের মহকুমা হাসপাতালে, কখনও এসএসকেএম। সোমবার সেই এসএসকেএম তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার রাতে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের তরফে একটি চিকিৎসক দল পৌঁছয় অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে। সেই দলে ছিলেন ডাক্তার চন্দ্রনাথ অধিকারী। তিনিই পরীক্ষা করেন অনুব্রত মণ্ডলকে। আর তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। যদিও তার পর দিন অর্থাৎ বুধবার ডাক্তার চন্দ্রনাথ দাবি করেন যে তিনি সাদা কাগজে অনুব্রতকে ১৪ দিন ‘বেডরেস্ট’ নেওয়ার পরামর্শ লিখে দেন। আর তা অনুব্রতের নির্দেশে করেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বীরভূমের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাড়ি এসে যে বেড রেস্টের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিবিআই এড়াতে অসুস্থতাকে আর ঢাল করা যাবে না বুঝেই তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন।
কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন মহলে কানাঘুষো চলছিল অনুব্রতের
গ্রেফতারি নিয়ে। অনুব্রত নিজেও গ্রেফতারির আশঙ্কা করছিলেন। বেশ কয়েকদিন আগে যে
সব রাজনৈতিক নেতাকে অনুব্রতের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত , তারাও গত
দু’দিন ধরে তার ছায়া মারাচ্ছে না। এমনকি, তার প্রিয়
সঙ্গী তথা বন্ধু রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও আসেননি অনুব্রতের সঙ্গে দেখা
করতে। তাতেই সম্ভবত অনুব্রত আন্দাজ করেছিলেন যে দল তাঁর সঙ্গে সাধ দিচ্ছে না।অনুব্রত
নিজের এই করুন পরিণতির কথা ভেবে আরো মূষরে পড়েছেন , যার ফলে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিজের ঘর
থেকেও বেরোননি। অথচ অন্যান্য দিন ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পুজো করেন। গত ১০ বছর ধরেই তিনি সকালে নিয়মিত হাঁটতেন। তার সঙ্গে খালি হাতে কিছু শারীরিক ব্যায়াম
ও করতেন। ডায়াবেটিস ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শেই
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতেন। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য সেসব কিছুই করতে দেখা যায়নি তাঁকে।হয়তো
অনুব্রত মণ্ডল অনুমান করেছিলেন যে তিনি বৃহস্পতিবার সকালে সিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করবে
।
0 মন্তব্যসমূহ
Do not share any Link